Saturday, December 29, 2012

২০১২ তে দেশে প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য যত ঘটনা

২০১২ সালে বাংলাদেশে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে কয়েকটি নেতিবাচক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নতির ধারা প্রকাশ করেছে। 
২০১২ সালে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে রয়েছে সাইবার-যুদ্ধ, ইউটিউব বন্ধ, থ্রি-জি চালু, গুগলের কার্যক্রম চালু, আউটসোর্সিংয়ের উন্নতি, ই-কমার্স ও প্রযুক্তিপণ্যে নতুনত্ব।

সাইবার যুদ্ধ
বাংলাদেশের কয়েকটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইট ভারতীয় হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাক হওয়ার পর ভারতীয় ওয়েবসাইটে পাল্টা হ্যাকিং শুরু করে ‘বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস’ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ। এভাবেই শুরু হয়েছিল ‘সাইবার-যুদ্ধ’। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের এ সাইবার-যুদ্ধের বিষয়টি বেশ গুরুত্ব দিয়েই প্রচার করা শুরু করেছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১০ দিনে ঘটে যাওয়া পাল্টাপাল্টি এ যুদ্ধ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। ভারতের ‘ইন্ডিশেল’ নামের একটি হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশের সরকারি সংস্থার কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাক করার পর শুরু হয়েছিল এ সাইবার-যুদ্ধের। এরপর মাঠে নামে ‘ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস’। তাদের সহযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘থ্রিএক্সপায়ারথ্রি সাইবার আর্মি ও বাংলাদেশ সাইবার আর্মি নামের আরও দুটি দল।

ইউটিউব বন্ধ
২০১২ সালে বাংলাদেশে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বড় ঘটনার একটি ছিল ইউটিউব বন্ধ হয়ে যাওয়া। ইউটিউব থেকে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) কটাক্ষ করে নির্মিত মার্কিন চলচ্চিত্র না সরানোয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) দেশে গুগলের ভিডিও সেবা ইউটিউব বন্ধ করে দেয়, যা এখনো চালু হয়নি। সরকারের নির্দেশে বিটিআরসি প্রথমে চিঠি দিয়ে চলচ্চিত্রটি সরিয়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়েছিল। এতে কাজ না হওয়ায় বিটিআরসি বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ করে দেয়। চলচ্চিত্রটির ভিডিও ইউটিউবে প্রচারের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বের মুসলমানরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ গুগল বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে বলেই জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শিগগিরই এ সাইটটি খুলে দেওয়ার আশা করছেন তারা।

থ্রি-জি চালু
দীর্ঘদিন ধরেই মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল, বিশ্বে যেখানে ৪-জি আর ৫-জি নিয়ে কাজ চলছে, সেখানে কবে আমাদের দেশে আসবে থ্রি-জি বা তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক-সুবিধা? এ বছরের ১৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মুঠোফোন অপারেটর টেলিটকের বহু প্রতীক্ষিত থ্রি-জি (থার্ড জেনারেশন) ফোনের সেবা। থ্রি-জি চালুর মাধ্যমে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে উন্মোচিত হয়েছে নতুন দিকের, জেগেছে নতুন সম্ভাবনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে থ্রি-জি প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক সেবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুঠোফোন খাতে থ্রি-জির সংযোজন করে বাংলাদেশ এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করল। এর ফলে মুঠোফোনে দ্রুতগতির ইন্টারনেট-সুবিধা পাওয়া যাবে এবং তথ্য-উপাত্ত আদান-প্রদান দ্রুত ও সহজ হবে। আগামী বছর দেশের অন্যান্য মুঠোফোন অপারেটরদের কাছেও থ্রি-জি লাইসেন্স দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।’

গুগলের বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু
বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। ভারতের পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সরাসরি কার্যক্রম শুরু করল সার্চ ইঞ্জিন খ্যাত গুগল। গুগলে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন কাজী মনিরুল কবির। গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি কনসালট্যান্ট’ পদে গুগলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন তিনি। তবে এখনই ঢাকায় অফিস স্থাপন করছে না গুগল। আপাতত গুগলের সিঙ্গাপুর অফিস থেকেই বাংলাদেশের সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তবে বাংলাদেশে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিয়ে গুগল খুবই আশাবাদী বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিশ্বের ৪৯টি দেশে গুগল তার কার্যালয় পরিচালনা করেছে। এসব দেশে গুগল বিভিন্ন বাণিজ্যিক সেবা দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (অ্যান্ড্রয়েড), স্মার্টফোন-সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা সরাসরি দিয়ে থাকে।

দেশে আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম শুরু
চলতি বছর বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসেবে পরিচিত ‘ইল্যান্স’। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং সাইটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করার ঘটনা এটাই প্রথম। বিশ্বের তৃতীয় দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে ইল্যান্স। ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইল্যান্সে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ইল্যান্সারের তথ্য অনুযায়ী, সাইটটিতে ২৮ হাজারের বেশি বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারের কাজ করেন। ৪ ডিসেম্বর বেসিস অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশে ইল্যান্সের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ইউরোপীয় শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেতিল জে ওলসেন। ইল্যান্স ছাড়াও বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সার ডটকম বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধার্থে তাদের ওয়েবসাইটটির একটি বাংলাদেশি সংস্করণ চালু করেছে। বিশ্বে অনলাইনে কাজের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।

স্থলপথে দ্বিতীয় উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ
স্থলপথে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশে। এর আগে টেলিযোগাযোগ সেবা শুধু আন্তর্জাতিক সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমেই বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ফলে সি-মি-উই ৪ এ কোনো সমস্যা দেখা দিলেই সমস্যায় পড়ত দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা। স্থলপথে ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের ফলে এ সমস্যা সমাধান হবে বলেই আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে দ্বিতীয় ইন্টারনেট ব্যাকআপ সংযোগ। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে স্থলপথে চালু হয়েছে এ ইন্টারনেট যোগাযোগ-ব্যবস্থা। আইটিসি প্রতিষ্ঠান ওয়ান এশিয়া কমিউনিকেশন ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংস লিমিটেড বাংলাদেশে যৌথভাবে এ সংযোগ চালু করেছে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতের প্রতিষ্ঠান টাটার সঙ্গে কেবল সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে এসটিএম-৬৪ পয়েন্ট। আইটিসির মাধ্যমে নির্বিঘ্নভাবে ভয়েস, ভিডিও এবং তথ্যসেবা পাওয়া যাবে। আইটিসির মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট তথ্য স্থানান্তর করার মতো গতি পাওয়া যাবে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার সাবমেরিন কেবলের পাশাপাশি ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবলে (আইটিসি) সংযুক্ত হওয়ার লাইসেন্স বা অনুমতি দিয়েছে।

দেশে নতুন নতুন প্রযুক্তিপণ্য
এ বছর দেশের বাজারে নতুন নতুন অনেক প্রযুক্তি পণ্যের প্রাচুর্য দেখা গেছে। এ বছর দেশের তরুণদের আগ্রহ ছিল স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটারে। এ বছর বাজারে এসেছে স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন স্মার্টফোন। তোশিবা, এইচপি, লেনোভোর নতুন মডেলের ল্যাপটপ। ট্যাবলেটের বাজারেও অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর অনেক ট্যাবলেটের প্রতি ঝুঁকেছেন প্রযুক্তিপ্রেমীরা। তবে মুঠোফোনের বাজারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে সিম্ফনি ব্র্যান্ড।

ই-কমার্স সাইট চালু
বাংলাদেশের এ বছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ই-কমার্সভিত্তিক ওয়েবসাইট। এ বছরে সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বিক্রয় ডটকম বাংলাদেশে অনলাইনে পণ্য বেচা-কেনার নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।

(লেখাটি দৈনিক প্রথম আলো থেকে সংগৃহীত)


Tuesday, December 25, 2012

হ্যাকারের ফাঁদ চেনার সাতটি উপায় !

মাছ ধরার টোপের মতোই ইন্টারনেটে টোপ ফেলে হ্যাকাররা। ‘আপনি পুরষ্কার জিতেছেন’ কিংবা ‘ফ্রি অফার’-এর নামে স্পাম মেইল সম্পর্কে বেশ পরিচিত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এতে হ্যাকাররা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে আপনার পিসি। এমনকি ওয়েবে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণে আড়িপেতে হ্যাক করতে পারে আপনার মেইলের সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিংবা হাতিয়ে নিতে পারে আপনার ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ। হ্যাকারদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি টুলসের কথা জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ সুরিস এর ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটিং -এর ভিজিটিং প্রফেসর এলেন উডওয়ার্ড। যুক্তরাজ্য সরকারের সাইবার সিকিউরিটি ও কম্পিউটিং আইন নিয়েও কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসিতে প্রকাশিত হ্যাকিংয়ের ৭ ফাঁদ প্রতিবেদনে তিনি হ্যাকারদের কৌশলগুলো তুলে ধরেন
*******************************************
১।  অসচেতনতা
একটু সচেতন না হলে তথ্যপ্রযুক্তির ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আপনার  নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে। হয়তো কোথাও বেড়াতে যাবার আগে আপনি বদলে নেন আপনার সুটকেসের কম্বিনেশন লক নাম্বার কিন্তু সেই আপনিই হয়তো ইমেইল, ফেইসবুক বা এমন কোনো ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড বিষয়ে উদাসীন। 
দেখা গেছে অনেকেরই ইমেইল পাসওয়ার্ড ‘১২৩৪৫৬’ !

২। কৌতুহল
জন্মসূত্রেই মানুষ কৌতুহলী। কোন ওয়েব সাইটে যদি লেখা থাকে “Do Not Press” সেখানেই মানুষ ক্লিক করে বেশি। এ ধরনের লিংকে ক্লিক করতেই আপনার ইন্টারনেট উপস্থিতির নিয়ন্ত্রন হ্যাকারদের কাছে চলে যাবার ভয় থাকে। ইন্টারনেটে লোভনীয় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তারা প্রভাবিত করে ব্যবহারকারীদের। এতে ক্লিক করলেই অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।
৩। ছাড়
ছাড়ের কথা শুনলেই আমরা একটু নড়েচড়ে বসি। এটা মানুষের সাধারণ আচরণের মধ্যেই একটি। লোভনীয় পণ্যে ছাড়ের কথা প্রকাশ হলেই তা নিয়ে শুরু হয় নানা অভিমত। অনুমান আর বাস্তবতার মধ্যে বিশাল ব্যবধান থাকায় প্রতারিত হন অনেকেই। বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাবে অনেকেই এই ছাড়ের ফাঁদে পড়ে। অনেক সময় ভ‚য়া ছাড়ের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন কোম্পানির অফিসিয়াল লোগো ও ই-মেইল ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এতে মানুষ সাইবার অপরাধের শিকার হয়।
৪। মিষ্টি কথায় ভোলা
আমরা শিশুদের শেখাই কিভাবে সুন্দর করে কথা বলতে হয়। কিন্তু অনলাইনে অপরিচিত কেউ যদি আপনার সঙ্গে মিষ্টি কথায় আলাপ জমায়, তা সেটি ইমেইল বা চ্যাট রুম যেখানেই হোক না কেন, সাবধান। ইন্টারনেটে আমরা যা কিছু ব্যবহার করি তার অধিকাংশই অপরিচিত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে হয়ে থাকে। আর অপরিচিতদের সঙ্গে আলাপে মিষ্টি কথায় ভুললেই বিপদ।
৫। লোভ
ইন্টারনেটে কোন কিছুই ফ্রি নয়। ফ্রি ডাউনলোড করতে দেয়া সবকিছুর পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য থাকে। অনেক সময় ভ‚য়া ডাউনলোড লিংকের কারণে ইউজার পড়ে যান বিপাকে। ফ্রি ডাউনলোড করতে গিয়ে অনেক সময় অজান্তে ম্যালওয়্যার ছড়ায় কম্পিউটারে। এটি কম্পিউটারের নিরাপত্তার বড় ধরণের হুমকি।  
৬। আত্মবিশ্বাসহীনতা
মানুষ সাধারণত নিজের আইডি অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চায় না। কেউ যদি ইন্টারনেটে আইটি সাপোর্ট দেয়ার প্রস্তাব করে পাসওয়ার্ড চায় এতে সতর্ক থাকুন। এতে সার্ভারের নিয়ন্ত্রন হ্যাকারদের কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় তাছাড়া অনেক স্পর্শকাতর তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ পায়। কেউ যাতে আপনার পাওয়ার্ড কোনো ভাবে অনুমান করতে পারে কি-না সেদিকে সতর্ক থাকুন।
৭। অমনোযোগ
খুব কম মানুষই আছেন যারা ই-মেইলে কোন লিংক আসলে তা মনোযোগ সহকারে দেখেন। অযাচিত লিংকে ক্লিক করলেই ম্যালওয়্যার ছড়াতে পারে আপনার পিসিতে। ই-মেইলে নিজের নিরাপত্তার জন্য এসব লিংক চেক করে নিলে ক্ষতিকর প্রোগ্রাম থেকে রক্ষা পাবে আপনার পিসি।
 সমাধান কী?
সাইবার সিকিউরিটির জন্য অ্যালেন উডওয়ার্ড দিয়েছেন ৩ পরামর্শ । এগুলোকে এবিসি হিসেবে উল্লেখ  করা হয়। এগুলো হচ্ছে :
হ্যাকিং সচেতনতায়
-    কোনো বিষয়ে অনুমান করবেন না।
-    কাউকে বিশ্বাস করবেন না। এবং
-    সবকিছু আগে যাচাই করে নিন

(লেখাটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম থেকে সংগ্রহ করা)


Monday, December 24, 2012

যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান' এর অভিমত. প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়াবে বাংলাদেশ !

ওয়ার্ল্ড এর জনপ্রিয় নিউজপেপার "গার্ডিয়ান" অভিমত !
প্রবৃদ্ধিতে পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়াবে বাংলাদেশ 

----------------------------
 ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমা দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। গত বুধবার যুক্তরাজ্যের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিকসভুক্ত দেশসহ (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মিসর, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা ও মেক্সিকোর অর্থনৈতিক শক্তি হু হু করে বাড়ছে। এ দেশগুলোর মধ্যে কোনোটি আয়তনে বড়, কোনোটি নবীন, আবার কোনোটিতে বেড়েই চলছে জনসংখ্যা। তারা অবকাঠামো ও শিক্ষা খাতে ব্যয় করছে। দেশগুলোর অর্থনীতি এমন হারে বাড়ছে যে তারা মন্দা ও খুঁড়িয়ে চলা পশ্চিমা দেশগুলোর হিংসায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একসময় যে দেশগুলোকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করা হতো, তারাই উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধির হিসাবে এই দেশগুলোই শীর্ষ ২০-এর মধ্যে থাকবে।
একটা সময় বৈশ্বিক অর্থনীতির ৮০ শতাংশ ছিল ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও জাপানের দখলে। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতির চেহারা এখন বদলে যাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কটি দেশ পেছন থেকে সামনের কাতারে উঠে আসছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার টেকসই ও শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে।
প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারসের (পিডব্লিউসি) প্রধান অর্থনীতিবিদ জন হকসওয়ার্থ মনে করেন, ব্রিকস ও অন্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর শক্তিশালী ও দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
দেশগুলোর দ্রুত উন্নতির মূলে রয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ, মানব মূলধন ও শিক্ষার মান উন্নয়নে বিনিয়োগ, পশ্চিমা প্রযুক্তি আমদানি ও উন্নয়নে এর সফল ব্যবহার এবং নবীন ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা।

New-wave economies going for growth.
http://www.guardian.co.uk/world/2012/dec/18/booming-economies-beyond-brics
As even Brics plateau, other countries, from Bangladesh to Mexico, are coming up fast - and could overtake the west by 2050



They are big. They have young and growing populations. They have invested in infrastructure and education. And they are growing at the sort of rates that make them the envy of the recession-hobbled west.
No, these are not the famed Brics – the big emerging market economies of which much has been heard since the acronym was first coined by Jim O'Neill of Goldman Sachs more than a decade ago. Rather, they are a second wave of countries – some Asian, some Latin American, some African – coming up fast behind.
As the west remains mired in gloom and even the Brics start to plateau, attention is turning to this group of countries, many of which not so long ago were rudely dismissed as basket cases. Acronyms are hard to coin, as few of them start with a vowel. But when growth rates for 2013 are chalked up, these are the countries that will dominate the top 20. In anticipation, the Guardian is launching a three-day series throwing the spotlight on several of these fast-growing countries.
The changing face of the global economy is reflected in the rapidly expanding scale of the summits designed to sort out its problems. Not so long ago, when 80% of global GDP was accounted for by Europe, North America and Japan, it was the G7 that was the forum that counted.
By the middle of the 2000s it became impossible to discuss the future of the world economy without the presence of China and India, and when a second great depression loomed in late 2008 the G20 was formed. This included not just the G8 and the Brics but a sprinkling of the more strategically important emerging economies, such as Indonesia, Turkey, South Korea, Mexico, Argentina and South Africa. Recent developments suggest that more seats may be needed at the conference table before too long.
While some emerging countries, such as Vietnam, have been hard hit by falling western demand for their exports since the financial crisis of 2007-08, others have been sustaining strong growth rates. Bangladesh and the Philippines have been helped by remittances sent home from expatriates working overseas. Nigeria has been a beneficiary of the global commodity boom that has seen the cost of a barrel of Brent crude oil remain above $100 a barrel. Mexico and Indonesia have generated strong domestic demand from their large populations.
John Hawksworth, chief economist at PricewaterhouseCoopers (PwC), said: "There are countries beyond the Brics that have quite strong long-term growth potential."

Forecasts

Back in 2006, PwC made some long-term forecasts about what the global economy might look like in 2050, and it has now updated the predictions in the light of the financial crisis and its aftermath. By 2050, Hawksworth expects Turkey's economy to be bigger than Italy's, and one of the largest in Europe. Indonesia and Mexico will have outstripped Germany and the UK.
Economists such as Hawksworth say there are a number of key factors that are allowing emerging countries to grow more quickly than the mature markets of the west. Firstly, they need sound macro-economic policies, including control of inflation and budget deficits. Secondly, they have invested in human capital, improving their educational standards. Thirdly, they have been able to import new technologies from the west, with the spread of mobile telephony in Africa an example of the way in which a lack of physical infrastructure can be bypassed to boost productivity quickly. Finally, they tend to have young and growing populations.
O'Neill, when he identified his "Next 11" group as the successors to the Brics, chose many of the most populous countries in the world for his list: Bangladesh, Egypt, Indonesia, Iran, South Korea, Mexico, Nigeria, Pakistan, the Philippines, Turkey and Vietnam.
"Some of these emerging countries have good demographics, based on a growing and younger population than countries in the west," Hawksworth said.
"They have a lot of potential for catch-up as long as they have broadly growth-friendly policies – a big if in some cases. They have the potential to absorb technology from overseas and can get rapid growth. It doesn't mean all will achieve it but a fair few will." He drew a comparison between South and North Korea, saying one of the world's last bastions of communism was an example of what happened to countries that cut themselves off.
HSBC has cut its growth forecast for 2013 because of the impact of collapsing world trade on those emerging markets that have based their development on export growth. But in the longer term, there is optimism even for what has up until now been the world's slowest-growing continent: Africa.
Charles Robertson, chief economist at Renaissance Capital, an investment bank for emerging markets, said he expected a sevenfold increase in Nigeria's GDP per head over the next four decades. "Africa today is a top 10 global economy, with $2tn of GDP – similar to Russia. By 2050, if it continues the trajectory it has been on for the past 30 years … it will be $29tn [£18tn] and bigger than the US and eurozone combined today."


সাদাসিধে কথা - বিশ্বজিতের লাল শার্ট (মুহম্মদ জাফর ইকবাল)

আমি মনে হয় বাংলাদেশের অল্প কয়জন সৌভাগ্যবান মানুষের একজন, আমার বাসায় টেলিভিশন নেই বলে আমাকে টেলিভিশন দেখতে হয় না। তাই ডিসেম্বরের ৯ তারিখ যখন ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে খুন করেছে, আমাকে সেই দৃশ্যটি দেখতে হয়নি। যারা দেখেছে, তাদের প্রায় সবারই মানুষ সম্পর্কে ধারণাটি পাল্টে গেছে। রাজনীতি, আইন, আইনের শাসন—এসব বিষয় নিয়ে তাদের অত্যন্ত নিষ্ঠুর একটি স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। সবার ভেতরেই যে একজন করে নিষ্পাপ মানুষ থাকে, সেই মানুষটি ভয়ংকরভাবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছে।
আমি কাপুরুষের মতো টেলিভিশন থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম, কিন্তু খবরের কাগজ থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারিনি। খবরের কাগজের ছবিগুলো না দেখে দ্রুত পৃষ্ঠাগুলো উল্টে ফেলার চেষ্টা করলেও ছবিগুলো আমার মাথায় গেঁথে গেছে, চারপাশে ঘিরে যখন ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে হত্যা করছে, সেই মুহূর্তের বিশ্বজিতের চোখের দৃষ্টি আমাদের সবাইকে বাকি জীবন তাড়া করে বেড়াবে, সেই দৃষ্টিতে আতঙ্ক বা যন্ত্রণা ছিল না, একধরনের অসহায় ব্যাকুলতা ছিল, চারপাশে অসংখ্য মানুষ দৃশ্যটি দেখছে, কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না, সেটি নিয়ে হয়তো জগৎসংসারের প্রতি একটা তীব্র অভিমান ছিল। কোনো কোনো ছবিতে বিশ্বজিতের শার্টটি ছিল হালকা সাদা রঙের, আবার কোনো কোনো ছবিতে সেটি ছিল উজ্জ্বল লাল রঙের, সেটি নিয়েও আমার মনে একটা প্রশ্ন ছিল। ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর একটু সাহস সঞ্চয় করে আমি যখন খবরের কাগজগুলো পড়েছি, ছবিগুলো নতুন করে দেখেছি, তখন আমি বুঝতে পেরেছি বিশ্বজিৎ লাল শার্ট পরেনি, রক্তে ভিজে তার শার্ট লাল হয়েছিল।
দেশের সব মানুষের মতো আমার মনেও অনেক প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে, খবরের কাগজ, টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান আর সাংবাদিকেরা শুধু ছবি তুলেই তাদের দায়িত্ব পালন না করে বিশ্বজিৎকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি কেন? এত কাছে পুলিশ থাকার পরও তারা এগিয়ে গেল না কেন? যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তখন হিপোক্রেটিক শপথ নেওয়া চিকিৎসকেরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করল না কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা নেই।

আবার কিছু কিছু ভয়ংকর প্রশ্নের উত্তর আমি অনুমান করতে পারি। যেমন ছাত্রলীগের যে কর্মীরা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করছিল, তারা দেখেছে চারপাশ থেকে ক্যামেরায় তাদের ছবি তোলা হচ্ছে, তার পরও তারা কেন ক্যামেরার সামনে এই পৈশাচিক উন্মত্ততায় বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে? কিংবা প্রশ্নটি আরও ভয়ংকরভাবে করা যায়, চারপাশে ক্যামেরা ছিল বলেই কি তারা এত উন্মত্ত হয়েছিল, যেন সবাইকে দেখানো যায় তাদের কত সর্বগ্রাসী ক্ষমতা, কত ভয়ংকর?
বহু বছর আগে কাদের সিদ্দিকী যখন আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে নিজের রাজনৈতিক দল গঠন করার জন্য একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা এসে পুরো আয়োজনটি লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল। আমি রাজনীতি ভালো না বুঝলেও অন্তত এতটুকু জানি এগুলো রাজনীতিতে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি ‘মাঠ দখল’ বা ‘রাজপথ ছাড়ি নাই’ এই ধরনের বাক্যাংশ দিয়ে এগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়। (সত্যি কথা বলতে কি, বিএনপি আর জাতীয় পার্টি এই দুটি দলই এই কায়দায় তৈরি হয়েছে, মিলিটারি জেনারেলরা প্রথমে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে, তারপর রাজনৈতিক দল করে গণতন্ত্রের জন্য জায়েজ করেছে) তবে আমার বক্তব্য একটু ভিন্ন জায়গায়, ছাত্রলীগের যে কর্মীরা কাদের সিদ্দিকীর সম্মেলনটি লন্ডভন্ড করেছিল, তারা সেখানেই থেমে যায়নি, তারপর তারা সংবাদপত্র অফিসে গিয়ে নিশ্চিত করেছিল সম্মেলন ভন্ডুলকারী সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে তাদের নামগুলো যেন পত্রিকায় ছাপা হয়। তাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে দেশের মানুষ এবং তাদের দলের নেতারা যেন ঠিকভাবে জানতে পারে কারা এই ‘গুরুদায়িত্ব’ সঠিকভাবে পালন করেছে।
আমি পরে অসংখ্যবার এটা দেখেছি এবং এটা শুধু ছাত্রলীগের ব্যাপার নয়। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের এই একই ব্যাপার। সন্ত্রাসী হিসেবে নিজের নাম ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে বিশাল কৃতিত্ব, হলে-হোস্টেলে ফ্রি খাওয়া যায়, কন্ট্রাক্টরদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা যায়, সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা যায় এবং ভবিষ্যতে বড় রাজনৈতিক নেতা হওয়া যায়। আমার ধারণা, বিশ্বজিতের বেলাতেও ঠিক একই ব্যাপার ঘটেছে। তাকে সবাই মিলে যখন কুপিয়ে হত্যা করেছিল, তখন তারা একবারও ভাবেনি সেটি গোপনে করতে হবে, এটি ছিল একধরনের বীরত্ব প্রদর্শন এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা ধরেই নিয়েছিল এটা যত মানুষ দেখবে সেটা তাদের তত মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যাবে। আমার ধারণা, টেলিভিশন-ক্যামেরা ইত্যাদি থাকার কারণে তাদের নৃশংসতা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছিল।
ছাত্রলীগের কর্মীদের ভাবনা যে মোটেও ভুল ছিল না, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার প্রমাণ পেয়েছি। একেবারে চোখের সামনে ঘটনা ঘটেছে, সবার নাম-পরিচয় জেনেও ছাত্রলীগ কর্মীদের বাঁচানোর জন্য পুলিশ মামলা করেছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নাম দিয়ে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংবাদপত্র আর টেলিভিশনের কারণে ততক্ষণে দেশের সব মানুষ হত্যাকারীদের চিনে গেছে, তাই তারা বিস্মিত হয়ে দেখল আসল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করে অন্যদের গ্রেপ্তার করে বসে আছে। ছাত্রলীগের কর্মীদের বাঁচানোর জন্য নতুন জজ মিয়ার নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। (সাগর-রুনির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য মাত্র কিছুদিন আগে এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য মামলার আসামিদের নাম ঘোষণা করেছেন। রামুর ঘটনার জন্য সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের দোষারোপ করেছেন কিন্তু পরের দিন কিংবা তার পরের দিনে আক্রান্ত হওয়া মন্দিরকে রক্ষা করতে পারেননি) পত্রপত্রিকাগুলো লেগে থাকল এবং তখন সত্যিকারের অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হতে শুরু করল।
এখন ভিন্ন একটি নাটক মঞ্চস্থ হতে শুরু করল, সবাই প্রমাণ করতে শুরু করল এই অভিযুক্তরা কেউ ছাত্রলীগের কর্মী নয়। ছাত্রলীগ বলল, এরা তাদের মিটিং-মিছিলে যোগ দিতে পারে কিন্তু এরা তাদের কর্মী নয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বললেন, আওয়ামী লীগকে দায়ী করা যাবে না, এর আগের দিন আনন্দ মিছিলে বোমা পড়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জোর গলায় বললেন এরা ছাত্রলীগের কর্মী নয়। সবচেয়ে হূদয়বিদারক কাজটি করলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব। ঘোষণা দিলেন অভিযুক্তরা সবাই জামায়াত-শিবির, কারণ তাদের আত্মীয়স্বজন জামায়াত-শিবির। (কয় দিন আগে আমি শিবিরের তরুণদের উদ্দেশ করে একটা লেখা লিখেছিলাম, সেটা পড়ে একজন আমার কাছে খুব দুঃখ করে লিখেছে, সে তার বাবা-মাকে ঘৃণা করে; কারণ, তারা জামায়াত করে, সে দেশকে খুব ভালোবাসে) বিশ্বজিতের মতো একজন তরুণের এ রকম একটি মৃত্যুর পর কেন পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এই হত্যাকারীদের রক্ষা করার জন্য এত ব্যস্ত হয়ে পড়ল? এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না, শুধু এটুকু জানি যে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা যত বড় অপরাধ, তার হত্যাকারীদের রক্ষা করার চেষ্টা করা তার থেকে অনেক বড় অপরাধ। যারা মনে করে দেশের সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে এত বড় একটা অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে, তারা এই দেশের মানুষকে চেনে না। আমি রীতিমতো অপমানিত বোধ করি, যখন দেখতে পাই এই দেশের সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে দেশের মানুষ নেহাত নির্বোধ—তাদের যেটা বলায় তারা সেটাই বিশ্বাস করে বসে থাকবে! এই দেশে যা কিছু ঘটছে, আমরা সেগুলো শুধু দূর থেকে খবরের কাগজ বা টেলিভিশনের ভেতর দেখি না, আমরা অনেক সময় নিজের চোখে সরাসরি দেখি, তাই প্রকৃত সত্যটা আমরা খুব ভালোভাবে জানি। তাই যখন কাউকে দেখি সেই সত্যটাকে লুকানোর চেষ্টা করছে বা বিকৃত করার চেষ্টা করছে, সেটা আমাদের কাছে গোপন থাকে না। যত অপ্রিয় হোক, যত ভয়ংকর হোক, যত নিষ্ঠুর হোক সেটাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। তা না হলে সেটা আরও শত গুণ অপ্রিয়, সহস্র গুণ ভয়ংকর আর লক্ষ গুণ নিষ্ঠুর হয়ে ফিরে আসে।
কিছুদিন আগে একজন আমার সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার—এ ধরনের বড় বড় বিষয় নিয়ে কথা বলছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় এই দেশের গণতন্ত্র বুঝি প্রায় একটা কৌতুকের মতো। বিশাল দক্ষযজ্ঞ করে নির্বাচন করে সাংসদেরা একদিনও সংসদে যান না (বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি আর বেতন-ভাতা রক্ষা করার জন্য এক-আধ দিন যেতে পারেন—আমি নিশ্চিত নই)! কাজেই এই দেশে বিরোধী দল হিসেবে সরকারের সমালোচনা করার কেউ নেই। সে জন্য সরকারকে সতর্ক করে গণতন্ত্রকে সচল রাখার পুরো দায়িত্বটি পালন করতে হয় সংবাদমাধ্যমের। আমাদের খুব সৌভাগ্য, আমাদের সংবাদমাধ্যম যথেষ্ট স্বাধীন এবং এবার আমরা দেখেছি, বিশ্বজিৎকে হত্যা করে সত্যিকারের অপরাধীরা যেন পার না পেয়ে যায়, সেটি এই সংবাদপত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
আমার ধারণা, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা সংবাদপত্রের এই ‘বাড়াবাড়ি’ দেখে খুব বিরক্ত হচ্ছেন, দেশে প্রতিদিন শত শত খুন হচ্ছে, ক্রসফায়ার হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ মানুষ গুম হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে একজন ছাপোষা দরজির মৃত্যু নিয়ে এত হইচই করার কী অর্থ? অনেকে নিশ্চয়ই এটাকে দেখছেন পরবর্তী নির্বাচনে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনার একটা সুগভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে। সত্য কথাটি হচ্ছে, সম্ভবত সত্যিই আওয়ামী লীগ যেন কিছুতেই পরের নির্বাচনে জিততে না পারে, কিংবা এই মুহূর্তেই যেন তাদের দুর্বল আর বিপর্যস্ত দেখায়, সে জন্য একটা গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে এবং সেই ষড়যন্ত্রটি করছে বিশ্বজিৎ হত্যাকারী ছাত্রলীগ এবং এই ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টারত আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ ও আমলারা। এই বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি তারা বুঝতে পারবে, দেশের জন্য তত মঙ্গল। আমরা খুব দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখতে চাই। এই দেশকে গ্লানিমুক্ত করতে চাই।
আমি নিজেকে বিশ্বজিতের আপনজনের জায়গায় বসিয়ে পুরো বিষয়টি কল্পনা করার চেষ্টা করে বুঝতে পেরেছি, তাদের পৃথিবীর কোনো মানুষ কোনো দিন সান্ত্বনা দিতে পারবে না। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে বিশ্বজিতের মনের ভেতর কী চিন্তা কাজ করেছিল, আমরা কোনো দিন সেটি জানতে পারব না। তার উদ্ভ্রান্ত ব্যাকুল দৃষ্টি দেখে সেটা শুধু হয়তো কল্পনা করতে পারব। পবিত্র কোরআন শরিফে আছে (৫.৩২) বিনা কারণে যদি কখনো কোনো মানুষকে হত্যা করা হয় তাহলে মনে করা যায় যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করা হলো। এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমিতে ডিসেম্বরের ৯ তারিখ সকাল নয়টার সময় পুরান ঢাকায় আমরা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করেছি।
আমি জানি এই তীব্র অপরাধবোধ থেকে আমাদের মুক্তি নেই। সত্যি যদি কোনোভাবে সান্ত্বনা খুঁজে পেতে চাই তাহলে কোরআন শরিফের সেই অংশেই পরের লাইনে ফিরে যেতে হবে, যেখানে বলা হয়েছে, যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে তাহলে সে যেন পুরো মানবজাতির প্রাণ রক্ষা করল।
আমরা কি মুক্তিযুদ্ধের রক্তস্নাত এই মাতৃভূমিতে সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করার নিশ্চয়তা দেব?

-মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।-


Thursday, December 13, 2012

আমি অভিশাপ দিচ্ছি (শামসুর রাহমান)

না আমি আসিনি
ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রাচীন পাতা ফুঁড়ে,
দুর্বাশাও নই,
তবু আজ এখানে দাঁড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক
কৃষ্ণপক্ষ দিয়েছিলো সেঁটে
মগজের কোষে কোষে যারা
পুঁতেছিল আমাদেরই আপন জনেরই লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত
যারা গণহত্যা করেছে
শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক পশু
সেই সব পশুদের।


ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে
নিমেষে ঝাঁ ঝাঁ বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকেবুকে যাবে তা আমি মানি না।
হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ
দিয়েছে ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু
করি না কামনা।


আমাকে করেছে বাধ্য যারা
আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত
সিঁড়ি ভেঙ্গে যেতে
ভাসতে নদীতে আর বনেবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে,
অভিশাপ দিচ্ছি, আমি সেইসব দজ্জালদের।
অভিশাপ দিচ্ছি ওরা চিরদিন বিশীর্ণ গলায়
নিয়ত বেড়াক বয়ে গলিত নাছোড় মৃতদেহ,
অভিশাপ দিচ্ছি

প্রত্যহ দিনের শেষে ওরা
হাঁটু মুড়ে এক টুকরো শুকনো রুটি চাইবে ব্যাকুল
কিন্তু রুটি প্রসারিত থাবা থেকে রইবে
দশ হাত দূরে সর্বদাই।


অভিশাপ দিচ্ছি
ওদের তৃষ্ণায় পানপাত্র প্রতিবার
কানায় কানায় রক্তে উঠবে ভরে, যে রক্ত বাংলায়
বইয়ে দিয়েছে ওরা হিংস্র
জোয়ারের মত।
অভিশাপ দিচ্ছি
স্নেহের কাঙ্গাল হয়ে ওরা
ঘুরবে ক্ষ্যাপার মতো এপাড়া ওপাড়া,
নিজেরি সন্তান
প্রখর ফিরিয়ে নেবে মুখ, পারবে না
চিনতে কখনো;


অভিশাপ দিচ্ছি এতোটুকু আশ্রয়ের জন্য, বিশ্রামের
কাছে আত্মসমর্পণের জন্যে
দ্বারে দ্বারে ঘুরবে ওরা। প্রেতায়িত
সেই সব মুখের উপর
দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে পৃথিবীর প্রতিটি কপাট,
অভিশাপ দিচ্ছি।
অভিশাপ দিচ্ছি,
অভিশাপ দিচ্ছি...

***********************
ঈষৎ সংক্ষেপিত, কবি শামসুর রাহমানের কবিতা সংগ্রহ থেকে নেওয়া
---------------------------------------


শেষ হলো ফেইসবুকের পলিসি পরিবর্তনের ভোট

টানা এক সপ্তাহ ভোটগ্রহণের পর শেষ হয়েছে ফেইসবুকের পলিসি পরিবর্তন নিয়ে উন্মুক্ত ভোট। ভবিষ্যতে ফেইসবুক সংশ্লিষ্ট কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পাবলিক ভোটিং সুবিধা থাকবে কিনা এবং ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে ডেটা শেয়ার করা হলে তা কিভাবে করা হবে, এরকম একাধিক নীতি নির্ধারণের জন্য আয়োজন করা হয়েছিলো উন্মুক্ত ভোটের। খবর সিএনএন-এর।

ফেইসবুকে ওপেন ভোটটি হোস্ট করে একটি থার্ড-পার্টি ওয়েব ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান। ভোটিং থেকে নিশ্চিন্তÍ কোনো সিদ্ধান্তে আসতে কম করে হলেও ৩০ শতাংশ ফেইসবুক ব্যাবহারকারীর এতে অংশ নিতে হবে। ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, ১শ’ কোটিরও বেশি অ্যাকটিভ ইউজার রয়েছে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটটির। সুতরাং, কম করে হলেও ৩০ কোটি ব্যবহারকারীর ভোট দিতে হবে।

তবে ৩০ শতাংশের স্থানে ভোটে অংশ নেন মাত্র দশমিক ২ শতাংশ ব্যবহারকারী। ফেইসবুক ভাইস প্রেসিডেন্ট এলিয়ট শ্রেজ এ ব্যাপারে জানান, ৩০ শতাংশের কম ভোট পড়লে ভোটের ফলাফল পরামর্শমূলক বলে বিবেচনা করা হবে।

তবে ভোটে অংশ নেয়া ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫২ জন ব্যবহারকারীর মধ্যে ৮৮ শতাংশ ফেইসবুকের বর্তমান পলিসিগুলো অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে ভোট দেন।

নিজেদের পলিসিগুলোর মধ্যে ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ যে পরিবর্তনগুলো আনতে চাইছে তার মধ্যে রয়েছে, ডেটা ইউজ পলিসি এবং স্টেটমেন্ট অফ রাইটস অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটিজ। এ ছাড়াও ২০০৯ সালে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা এবং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে চালু করা পাবলিক ভোটিং সিস্টেমটিও বাদ দিতে চাইছে ফেইসবুক।

ভোটের ফলাফল প্রকাশ করবে তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২৯ কোটি ব্যবহারকারীর ভোট যদি কোনো অলৌকিক উপায়ে হাজির না হয় তবে ভোটের ফলাফল অনেকটাই পরিষ্কার।



(সুত্রঃ বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/জায়েদ/ডিসেম্বর ১২/১২)


আসছে ফেসবুক ফোন 'বাফি'

সোশাল নেটওয়ার্কিং জায়ান্ট ‘ফেসবুক’ নিজস্ব মোবাইল ফোন তৈরি করছে বলে আগেই গুজব রটেছিলো। কিন্তু ফেসবুক সে গুজব পাত্তা না দিলেও তার গোপনে মোবাইল ফোন তৈরির তথ্য ফাঁস করেছে অল থিংস ডিজিটাল সাইটে। ফাঁস হওয়া তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ‘বাফি’ কোড নাম ব্যবহার করে মোবাইল ফোন তৈরি করছে। খবর অল থিংস ডিজিটাল-এর। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের হ্যান্ডসেট তৈরি করতে তাইওয়ানের বিখ্যাত মোবাইল যন্ত্রাংশ নির্মাতা এইচটিসি’র সঙ্গে কাজ করছে। জানা গেছে, ফেসবুকের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ব্রেট টেলর এ ফোন তৈরির দায়িত্বে আছেন।
‘বাফি’ স্মার্টফোনটিতে গুগল অ্যান্ড্রয়েডের সাম্প্রতিক সংস্করণ আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ব্যবহার করা হতে পারে। এইচটিএমএল৫ অ্যাপ্লিকেশন আকারে ফেসবুক এ মোবাইলে যুক্ত করা হতে পারে। এ ছাড়াও এতে ফেসবুক-এর জন্য আলাদা বাটনও থাকবে।

উল্লেখ্য, এর আগে ‘চাচা’ এবং ‘সালসা’ নামে ফেসবুকের বিশেষ বাটনযুক্ত দুটি স্মার্টফোন তৈরি করেছিলো এইচটিসি।

আগামী বছরই ‘বাফি’ বাজারে আনতে পারে ফেসবুক।

এর আগে মোবাইল তৈরির গুজব উড়িয়ে দিলেও এখনো ফাঁস হওয়া তথ্য বিষয়ে মুখ খোলেনি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এদিকে, প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা বলছেন, ফেসবুক মোবাইল বাজারে এলে অ্যাপল, গুগল, নকিয়াসহ বিভিন্ন স্মার্টফোনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করে তবেই টিকে থাকতে হবে।
http://www.bbc.co.uk/news/technology-18234004
http://tech.bdnews24.com/


ফ্রি সিকিউরিটি সফটওয়্যারের সম্ভার

কম্পিউটার চালাতে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা হচ্ছে অ্যান্টিভাইরাস সক্রিয় আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া। একটু সতর্কতার অভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট হয়ে যেতে পারে ক্ষতিকর প্রোগ্রামের মাধ্যমে। ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সময় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে সিকিউরিটি সফটওয়্যার না থাকলে এক মিনিটের ব্রাউজিংয়েও ভাইরাস আক্রমণ করতে পারে আপনার পিসিকে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ম্যাক কম্পিউটারকে ভাইরাসমুক্ত অপারেটিং সিস্টেম বলা হলেও তা ম্যালওয়্যারের ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষম নয়। টেকনোলজি ওয়েবসাইট কমান্ডো ডটকম-এর সিকিউরিটি সেন্টার থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হলো।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারে ট্রোজান ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়। এটা বেশ কার্যকর। তাছাড়া কম্পিউটারের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিভাইরাসের দামও বেশি নয়।

ইন্টারনেটে লাখো ধরনের ম্যালওয়্যার রয়েছে। ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান, ডায়ালার ছাড়াও বিভিন্ন নামে ম্যালওয়্যার ঘুরে বেড়ায় বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে। অ্যান্টিভাইরাস এ ধরণের ম্যালওয়্যার স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারে। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।

শুধু একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। অ্যান্টিভাইরাস অনেকগুলো ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ না। তবে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছেন, সেটা আপডেট রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় মাঝেমধ্যে এটা আপডেট রাখা কম্পিউটারের জন্যই নিরাপদ। উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের কয়েকটি ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস হচ্ছে-
এভিজি অ্যান্টিভাইরাস
এভাস্ট
এভিরা অ্যান্টিভাইরাস পার্সোনাল
মাইক্রোসফট সিকিউরিটি এসেনসিয়ালস।

ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য কয়েকটি ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারগুলো হচ্ছে-
সপোস অ্যান্টিভাইরাস ফর ম্যাক হোম এডিশন
এভিরা অ্যান্টিভার পার্সোনাল।

ফায়ারওয়াল
হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে আপনার কম্পিউটারকে নিরাপদ রাখবে ফায়ারওয়াল। অনলাইনে থাকাকালীন আপনার কম্পিউটারের ট্রাফিক চেক করবে সফটওয়্যারটি। তাই বলে একসঙ্গে একাধিক ফায়ারওয়াল ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাহলে ফায়ারওয়াল কাজ করবে না।
উইন্ডোজ ও অ্যাপল-দুই অপারেটিং সিস্টেমেই রয়েছে বিল্টইন ফায়ারওয়াল। এছাড়া থার্ড পার্টি ফায়ারওয়্যালের মধ্যে রয়েছে-
জোন অ্যালার্ম
আউটপোস্ট ফায়ারওয়াল।

অ্যান্টি স্পাইওয়্যার
স্পাইওয়্যার এবং অ্যাডওয়্যার কম্পিউটার সিকিউরিটির ক্ষেত্রে বড় হুমকি। এ দু’টি প্রোগ্রাম কম্পিউটারের গতি কমিয়ে দেয়। ডেটা সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে অ্যান্টি স্পাইওয়্যার। যেমন-
এড-অ্যাওয়ার
স্পাইবুট সার্চ এন্ড ডেস্ট্রয়
স্পাইওয়্যার ব্লাস্টার ইত্যাদি।

অ্যান্টি ম্যালওয়ার
কম্পিউটিংয়ে কোনো সিস্টেম ব্যবহার ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ নয়। এ প্রোগ্রামগুলো অধিকাংশই ক্ষতিকর প্রোগ্রাম মুছে ফেলতে পারবে। এজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে-
ম্যালওয়্যারবাইটস
উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অফলাইন।

এ সফটওয়্যারগুলো ডাউনলোডের জন্য অবশ্যই নির্ভরযোগ্য সাইটের সাহায্য নিতে হবে। ডাউনলোড ডটকম-এধরনের একটি ভাইরাসমুক্ত, নির্ভরযোগ্য সাইট। এছাড়া প্রতিটি সফটওয়্যারই তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা সম্ভব।

(সুত্রঃ বিডি নিউজ২৪ ডটকম)


বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু সুরসম্রাট পণ্ডিত রবিশঙ্কর আর নেই !

Pandit Ravi Shankar
Born: April 7, 1920, Varanasi
Died: December 11, 2012, San Diego
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অকৃত্রিম বন্ধু ও উপমহাদেশের সুরসম্রাট পণ্ডিত রবিশঙ্কর আর নেই। গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সানডিয়াগো শহরের একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। আজ বুধবার ‘দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া’র অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মৃত্যুকালে রবিশঙ্করের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। সেতার-সুরের এই মহান স্রষ্টা গত এক সপ্তাহ চিকিত্সাধীন ছিলেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের জটিলতা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
প্রায় তিন দশক বহির্বিশ্বে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন রবিশঙ্কর।
১৯২০ সালে ভারতের বেনারসে জন্মেছিলেন রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী; যিনি ‘রবিশঙ্কর’ নামেই বিশ্বে সুপরিচিত। শৈশবে ভাই উদয় শঙ্করের নাচের দলে কাজ করেছেন। ১৯৩৮ সালে নাচ ছেড়ে দিয়ে সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁর কাছে সেতার শেখা শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে সংগীতপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তাঁর। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেডিওর সংগীতপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সত্যজিত্ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫), ‘অপরাজিত’ (১৯৫৬) এবং ‘অপুর সংসার’ (১৯৫৯) ছবির সংগীতপরিচালনা করে ব্যাপক প্রশংসিত হন রবিশঙ্কর।
১৯৫৬ সাল থেকে বেশ কটি সফরের মাধ্যমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জনপ্রিয় করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এই গুণী শিল্পী। ষাটের দশকে তিনি কয়েকটি দেশে শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এসব কাজ করতে গিয়ে বিটলস ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসন ও প্রখ্যাত মার্কিন বেহালাবাদক মেনুহিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁরা একসঙ্গে কাজ করেন।
This archive photo shows two icons of world music
Indian sitar maestro Pandit Ravi Shankar and American singer-guitarist George Harrison
 who together performed at the “Concert for Bangladesh”
in Madison Square Garden in New York on August 1, 1971

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই সেতারশিল্পী। বিটলস ব্যান্ডের সংগীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসনকে সঙ্গে নিয়ে রবিশঙ্কর আয়োজন করেছিলেন সাড়া জাগানো ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
জীবদ্দশায় বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই মহান শিল্পী। ১৯৯৯ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয় তাঁকে। তিনটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন এই কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-12/news/312669
http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=260952
http://www.thedailystar.net/newDesign/news-details.php?nid=260949


Tuesday, December 11, 2012

বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা মাইক্রোসফট এইবার চালু করল সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট SOCL!

বৎসর এর শেষ মুহূর্তে বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট নিয়ে আসল আরেকটা চমক !এইবার তারা ফেসবুক  টুঁইটার এবং প্লাস গুগল এর সাথে টক্কর দিতে চালু করল সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট SOCL! 
এই ওয়েবসাইট টি সম্প্রতি ব্যবহারকারীদের জন্য খুলে দেওয়া  হয় পুরো ওয়ার্ল্ড এ ।
অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের মতো এসওসিএলেও ছবি, ভিডিও রাখা যাবে। আর প্রয়োজনীয় লিংক শেয়ার করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা।
চলতি বছরেই সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকের মতো একটি ওয়েবসাইট চালু করার ঘোষণা দেয় মাইক্রোসফট।
সামাজিক যোগাযোগের সাইট গুলো ব্যবসায়িক দিক দিয়ে লাভজনক ;) ! অতএব এই লাভজনক খ্যাত থেকে ওরা কেন দূরে থাকবে ? তাই মনেহয় মাইক্রোসফট চিন্তা করল ঝাপিয়ে পড়ি যা আছে কপালে :D
আর ব্যাবহার করার মানুষের অভাব আছে ওয়ার্ল্ড এ ? তার উপর মাইক্রোসফট এর মতো একটা প্রতিষ্ঠান !

ইতিমধ্যে যাঁদের ফেসবুক কিংবা মাইক্রোসফটে অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁরা সরাসরি সাইটটিতে প্রবেশ করতে পারবেন। :)
সাইন আপ করার পর এ সাইটে ফেসবুকের মতোই ছবি, ভিডিও, লিংক শেয়ার করা যাবে। মন্তব্য করা যাচ্ছে অন্যের পোস্ট কিংবা স্ট্যাটাসেও। প্রথম পাতায়ও দেখা যাবে সাম্প্রতিকতম সব পোস্ট। ফেসবুকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাইক্রোসফটের এমন উদ্যোগ হলেও সাইটটি জনপ্রিয় করতে অনেক নতুন বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ফেসবুক এখন যে জায়গায় আছে সেখানে পৌঁছানো সহজ হবে না। তাই দারুণ কিছু সুবিধা, বৈশিষ্ট্য এবং সর্বশেষ প্রযুক্তিসুবিধাযুক্ত কিছু দিতে পারলে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সে পথেই এগোতে চায় মাইক্রোসফট, জানালেন নতুন এসও. সিএলের সঙ্গে যুক্ত মাইক্রোসফটের একজন মুখপাত্র।
*****************************************
এখন আমাদের দেখার পালা সামাজিক যোগাযোগের  দৌড়ে মাইক্রোসফট কতটা সফল হতে পারে ?
পরিশেষ এ SOCL এর সাফল্য কামনা করে এই পোস্ট এর ইতি টানলাম
(সুত্রঃ- prothom-alo.com/ pcworld.com/bbc.co.uk/gmanetwork.com)


ইরানের তৈরি করল নিজস্ব ভিডিও শেয়ারিং সাইট ‘মেহর

গুগলের জনপ্রিয় ভিডিও সাইট ইউটিউবের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ‘মেহর’ নামের একটি ভিডিও সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট তৈরি করেছে ইরান। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে গতকাল রবিবার এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইউটিউবে মুসলমানদের জন্য আপত্তিকর ভিডিও না সরানোয় নিজস্ব ভিডিও সাইট চালু করেছে দেশটি।
‘মেহর’ শব্দটির বাংলা অর্থ ‘স্নেহ’ বা ‘আবেগ’। ওয়েবসাইটটিতে ইরানের সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করার ব্যবস্থা থাকছে। এ ভিডিও সাইটটির একটি ফেসবুক পেজও রয়েছে।
সম্প্রতি এক খবরে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ইরানে কঠোরভাবে ইন্টারনেটের ওপর নজরদারি করা হয়। অনেক বিদেশি ওয়েবসাইট দেশটিতে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে আপত্তিকর মন্তব্য বা বার্তা পোস্ট করার বিষয়টি নজরদারিতে রাখা হয়।
সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ করছে। ‘ন্যাশনাল ইন্টারনেট’ চালুর মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ করছে দেশটি।
ইরানের নতুন ভিডিও সাইটটির ঠিকানা http://www.mehr.ir 
(সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো )


Saturday, December 8, 2012

গুগল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কার্যক্রম শুরু

বিশ্বের বৃহত্তম ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে। এ জন্য গুগলের বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন গ্রামীণফোনের সাবেক প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা কাজী মনিরুল কবির। গতকাল সোমবার তিনি বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি কনসালট্যান্ট’ পদে গুগলে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন।
গুগলের বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু হলেও ঢাকায় অফিস স্থাপন করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান মনিরুল কবির। আপাতত গুগলের সিঙ্গাপুর অফিস থেকেই বাংলাদেশের সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। গুগলের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের জন্য মনিরুল কবির বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের আর্থিক সম্ভাব্যতা, আইনগত বিভিন্ন বিষয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তার প্রতিনিধিত্বে গুগল বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছে।
মনিরুল কবির গুগলে যোগদানের আগে ২০০৯ সাল থেকে গ্রামীণফোনের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ২০১০ সালে গ্রামীণফোন টেলিনর গ্রুপের পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া তিনি বাংলালিংক, রহিমআফরোজ, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোসহ দেশের শীর্ষপর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস অ্যাডিমিনিস্ট্রেশন থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করার পর বার্লিন স্কুল অব ক্রিয়েটিভ লিডারশিপে এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি।
গুগল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্বের ৪৯টি দেশে গুগল তার কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত করেছে। এসব দেশে গুগল বিভিন্ন বাণিজ্যিকের পাশাপাশি নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম (অ্যান্ড্রয়েড), স্মার্টফোন সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা সরাসরি দিয়ে থাকে। এর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকাসহ আশপাশের কয়েকটি দেশে গুগলের অফিস রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশেও সম্প্রতি যাত্রা শুরু করেছে।
এটি মূলত কান্ট্রি কনসালট্যান্সি অফিস হিসেবে কাজ করবে। এ অফিস আর্থিক ও আইনগত বিভিন্ন বিষয়ে গুগলের সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করবে। এরপর আর্থিক দিক লাভজনক প্রমাণিত হলেই গুগল বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করে সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আর্থিক দিক থেকে টেকসই প্রমাণিত না হওয়ায় পাকিস্তানে গুগল চার বছরেরও বেশি কনসালট্যান্সি লেভেলে কার্যক্রমের মধ্যেই রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত ‘আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনাময়’ মনে করছে গুগল। বিশেষ করে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার দেখে মুগ্ধ গুগল। ইন্টারনেটের ব্যবহার বেশি হলেও কনটেন্ট খুবই কম। এ কারণেই এ বাজারটি খুব সম্ভাবনাময় মনে করে তারা। বিশেষ করে কনটেন্ট বৃদ্ধি পেলে ইন্টারনেটের ব্যবহারও দ্রুতগতিতে বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করে গুগল। ফলে দ্রুতই বাংলাদেশের অফিস স্থাপন সম্ভব হবে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
(সুত্রঃ কমপিউটার জগৎ)
http://www.comjagat.com/


Friday, December 7, 2012

তোমরা যারা শিবির করো (মুহম্মদ জাফর ইকবাল)

বেশ কিছুদিন আগের কথা। আমি আমার অফিসে যাচ্ছি, তখন বারান্দায় আমার দুজন ছাত্রের সঙ্গে দেখা হলো, তারা আমাকে কিছু বলল না কিন্তু তাদের দেখে আমার মনে হলো, তারা আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমরা কি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও?’ তারা মাথা নাড়ল, একজন কুণ্ঠিতভাবে আমার হাতে দুটি বই তুলে দিয়ে বলল, ‘স্যার, আপনাকে এই বই দুটি দিতে এসেছি।’ আমি বই দুটি নিলাম। বিজ্ঞানের ওপর চমৎকার দুটি বই, হাতে নিয়ে বললাম, ‘থ্যাংকু। সুন্দর পাবলিকেশন্স।’ তারপর বই দুটি খুললাম, ভেতরে লেখা ইসলামী ছাত্রশিবির।
মুহূর্তে আমার সারা শরীর শক্ত হয়ে গেল। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আজ্ঞাবহ হয়ে এই দেশে যে ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, সে জন্য আমি তাদের কখনো ক্ষমা করিনি। আমি জেনেশুনে কখনো কোনো জামায়াতে ইসলামীর নেতার সঙ্গে হাত মেলাইনি। আমার যে আপনজনেরা মুক্তিযুদ্ধে মারা গিয়েছে, তাদের সম্মান দেখানোর জন্য এটি আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমেরিকান এম্বাসির এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে যখন আবিষ্কার করেছি, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরও ডাকা হয়েছে, আমি সেখান থেকে উঠে চলে এসেছিলাম। আমি আমার এই বিশ্বাসের কথা কখনো গোপন রাখিনি। কাজেই এই দুজন ছাত্র সেটা জানে না, তা হতে পারে না।
আমি ছাত্রদের বই দুটি ফেরত দিয়ে অত্যন্ত কঠিন গলায় বললাম, ‘জামায়াতে ইসলামীকে আমি কোন চোখে দেখি, তোমরা জানো না? তোমরা সেই দলের মানুষ হয়ে তোমাদের সংগঠনের বই আমাকে উপহার দিতে এসেছ? তোমরা আমাকে চেনো না?’
ছাত্র দুটির চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় বদর বাহিনীর প্রধান হয়ে নিজামী আর মুজাহিদ কী করেছে, তাদের মনে করিয়ে দিলাম। গোলাম আযম যুদ্ধের সময় কী করেছে এবং বাংলাদেশের জন্মের পরও কীভাবে তারা বিরোধিতা করেছে, সেই কথা বললাম। আমার মতো শিক্ষকেরা জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনের সদস্যদের তৈরি বদর বাহিনীর হাতে কীভাবে মারা গিয়েছে, সেই ঘটনাগুলো বলে তাদের কাছে জানতে চাইলাম, কম বয়সী তরুণ হওয়ার পরও তারা কেমন করে যুদ্ধাপরাধীদের একটা সংগঠনের সদস্য হতে পারল?
একজন ছাত্র দুর্বল গলায় বলল, ‘স্যার, আমরা তো জামায়াতে ইসলামী করি না। আমরা ছাত্রশিবির করি।’
অনেক দিন আগের কথা, জামায়াতে ইসলামী আর ছাত্রশিবিরের মধ্যে পার্থক্যটুকু নিয়ে আমি তাদের কী বলেছিলাম, আমার এখন মনে নেই। শুধু মনে আছে, ছাত্র দুটি মাথা নিচু করে আমার কাছ থেকে ফিরে গিয়েছিল।
নানা কারণে এই ঘটনার কথা আমি ভুলতে পারি না। আমি ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য লেখালেখি করি। আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা একটি নতুন বাংলাদেশের সন্তান এবং তারা বড় হয়ে আমাদের দেশটাকে পাল্টে দেবে। আমি যখন সেই কথাটা তাদের বলি, আমার ধারণা, তারা আমার কথা বিশ্বাস করে। তাই তাদের অনেকেই আমার কাছে উৎসাহের কথা, অনুপ্রেরণা কিংবা স্বপ্নের কথা শুনতে আসে। শিবিরের এই দুটি ছেলে নিশ্চয়ই ভেবেছিল, তাদের এই চমৎকার বই দুটি আমাকে মুগ্ধ করবে, আমি উৎসাহসূচক কিছু বলব। অন্য দশজন তরুণের মতো তারাও এক ধরনের দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল, কিন্তু আমি তাদের আশা পূরণ করতে পারিনি। আমার ভয়ংকর রকমের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে তারা নিশ্চয়ই হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল—কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না।
আমি তাদের কথাগুলোও ভুলতে পারি না। তারা আমাকে বলেছিল যে তারা জামায়াতে ইসলামী করে না, তারা শিবির করে। তাহলে তারা কি সত্যিই বিশ্বাস করে যে তারা জামায়াতে ইসলামী থেকে ভিন্ন? ১৯৭১ সালে এই দেশে জামায়াতে ইসলামী যে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড করেছে, যে অমানুষিক নির্যাতন করেছে, যে ভয়ংকর হত্যাকাণ্ড করেছে, সেগুলো তাদের কোনোভাবে স্পর্শ করে না?
এই দুজন ছাত্র ছাড়া আর কখনোই কোনো জামায়াত বা শিবিরকর্মী আমার কাছে কথা বলতে আসেনি, তাই আমি কোনো দিন হয়তো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাব না।

২.
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে, এই দীর্ঘ জীবনে আমি সবচেয়ে বিচিত্র, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বিষয় কী দেখেছি। আমি এতটুকু দ্বিধা না করে বলব, সেটি হচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তার কারণ, যে বয়সটি হচ্ছে মাতৃভূমিকে ভালোবাসার বয়স, সেই বয়সে তারা ভালোবাসে দেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকদের, যারা এই মাতৃভূমির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। যে বয়সে একজন তরুণের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা অনুপ্রাণিত হয় সেই মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাকারীদের দিয়ে। যে বয়সে তাদের স্বপ্ন দেখার কথা দেশের বড় বড় লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিককে নিয়ে, সেই বয়সে তারা আনুগত্য মেনে নিয়েছে সেই সব মানুষের, যারা আলবদর বাহিনী তৈরি করে একাত্তরে এই দেশের লেখক, শিল্পী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী আর সাংবাদিকদের হত্যা করেছে! যে বয়সে তাদের একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাতফেরি করার কথা, ষোলোই ডিসেম্বরে স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার কথা, পয়লা বৈশাখে রাজপথে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা যে শুধু এই অবিশ্বাস্য আনন্দ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করে রাখে তা নয়, তারা এগুলোকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। যে বয়সে তাদের মুক্তচিন্তা শেখার কথা, গান গাওয়ার কথা, নাটক করার কথা, আদর্শ নিয়ে ভাবালুতায় ডুবে যাওয়ার কথা, সেই সময় তারা ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে নিজেদের আটকে রাখতে শেখে, সাম্প্রদায়িক হতে শেখে, ধর্মান্ধ হতে শেখে। যে বয়সে ছেলে আর মেয়ের ভেতর সহজ ভালো লাগা ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার কথা, সেই বয়সে তারা সেই অনুভূতিগুলোকে অশ্রদ্ধা করতে শেখে—সে জন্য তারা কত দূর যেতে পারে, সেটা আমি নিজের চোখে দেখেছি, সেই ভয়ংকর কাহিনি আমি কখনো কাউকে বলতেও পারব না!
যখন এই বাংলাদেশের সব মানুষ দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য অপেক্ষা করছে, তখন ইসলামী ছাত্রশিবির নামে এই সংগঠনের হতভাগ্য তরুণদের পথে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য। খবরের কাগজ খুললেই দেখতে পাই, এখনো দেশের আনাচকানাচ থেকে তাদের ধরে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। আমার খুব জানার ইচ্ছে করে যে নেতারা তাদের বুঝিয়েছে, রাস্তায় নেমে চোরাগোপ্তা হামলা করে পুলিশের গাড়ি পোড়াতে হবে, নিজের ভবিষ্যৎকে বিপন্ন করতে হবে। সেই সব নেতা কি তাদের সন্তানদেরও পথে নামিয়েছে? আমি মোটামুটি নিশ্চিত, সেটি ঘটেনি। আমি আগেও দেখেছি, এই নেতারা যখন তাদের কর্মী বাহিনীকে অনিশ্চিত জীবনের দিকে ঠেলে দেয়, তখন তাদের সন্তানেরা ইংরেজি মিডিয়াম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলে।
আমি অনেক চিন্তা করেছি, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারিনি, কেমন করে বাংলাদেশের মতো রক্তস্নাত একটি দেশে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা নৃশংস পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, সেখানে একজন মানুষ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের ভালো না বেসে তাদের হত্যাকারীদের ভালোবাসতে পারে! আমার মনে আছে, আমি বহুকাল পরে যখন প্রথম এই দেশে ফিরে এসেছিলাম, তখন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একটা মিছিল দেখে একধরনের অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তখন লক্ষ করেছিলাম, একজন ছাত্র তার হাতের ফাইল দিয়ে নিজের মুখটি ঢেকে রেখেছে, যেন আমি তার মুখটা দেখতে না পারি। আমার সামনে এই পরিচয় দিতে তার লজ্জা কিন্তু এই মিছিল থেকে তার বের হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই—এর চেয়ে দুঃখের ব্যাপার আর কী হতে পারে?
একজন ছাত্র কেমন করে শিবির করে, তার একটি উত্তর অবশ্য আমি একবার খুঁজে পেয়েছিলাম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র একবার আমাকে একটি এসএমএস করে জানিয়েছিল যে সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, খুব ভালো ছাত্র এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার খুব ইচ্ছে। তার বিভাগীয় প্রধান জামায়াতে ইসলামীর লোক এবং তাকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে সে যদি শিবির না করে, তাহলে তাকে শিক্ষক হতে দেওয়া হবে না। সে জন্য সে শিবিরে যোগ দিয়েছে এবং এটি নিয়ে তার কোনো অহংকার নেই। সেই এসএমএসটিতে আমি একজন মেরুদণ্ডহীন অসহায় হতভাগা মানুষকে আবিষ্কার করেছিলাম। তার জন্য কোনো মমতা নয়, আমি করুণা অনুভব করেছিলাম। আমি ইচ্ছে করলেই সেই ছাত্রটিকে খুঁজে বের করতে পারতাম, তার নীতিহীন বিভাগীয় প্রধানের পরিচয় জানতে পারতাম কিন্তু আমি তার কিছুই করিনি—আমার রুচি হয়নি।
আমার মাঝেমধ্যে জানার ইচ্ছে করে, এ ধরনের কারণে কতজন তরুণ শিবিরে যোগ দিয়েছে—কোনো স্বপ্ন নয়, কোনো আদর্শ নয়, শুধু স্বার্থ, শুধু চাওয়া-পাওয়া। মাঝেমধ্যেই পত্রপত্রিকায় দেখতে পাই, জামায়াতে ইসলামীর নাকি অনেক অর্থবিত্ত, তাদের অনেক ধরনের ব্যবসা। এই দলে যোগ দিলে নাকি তাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা হল দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই হলে সিট পাওয়া যায়। তারা কলেজ দখল করে রাখে, তাদের দল করলে সেই কলেজে ভর্তি হওয়া যায়। পত্রপত্রিকায় দেখি, পরিচিতদের কাছে শুনি, তাদের দল নাকি অত্যন্ত সংগঠিত। আদর্শ ছাড়া কিংবা ভুল আদর্শের সংগঠন কি খুব বেশি দিন টিকে থাকতে পারে? দীর্ঘদিন মিলিটারির শাসনে থাকার কারণে মানুষ যখন বিভ্রান্ত ছিল, তখন এই দেশে জামায়াতে ইসলামীরা ইলেকশনে ৩০টার মতো সিট পেয়েছিল। (কী লজ্জা!) যখন দেশের মানুষ গণতন্ত্রের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছে, একটু বুঝতে শুরু করেছে তখন তাদের সিটের সংখ্যা এক-দুইয়ে নেমে এসেছিল। উপায় না দেখে তখন তারা বিএনপির ঘাড়ে চড়ে বসেছে, আবার তারা গোটা ত্রিশেক সিট পেয়েছে, মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছে। দেশের মানুষ যখন আবার সজাগ হয়েছে, তখন সিটের সংখ্যা আবার এক-দুইয়ে নেমে এসেছে। এখন তারা কার ঘাড়ে উঠবে। এই দেশে যদি নির্বাচন করেই শুধু ক্ষমতায় যাওয়া যায়, তাহলে তাদের জন্য কোন পথটুকু খোলা আছে। আমার খুব আশা ছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে দেশের মানুষের এত আগ্রহ, এত উত্তেজনা দেখে বিএনপি হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের এই দলটিকে পরিত্যাগ করবে—তারা করেনি। আমি খুব আশাহত হয়েছি কিন্তু তাদের ছাত্রসংগঠন আমাকে আশাহত করেনি। তারা শিবিরের সঙ্গে হাত মেলাতে রাজি হয়নি।
আমি রাজনীতি ভালো বুঝি না, আমার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কারও গুরুত্ব দিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমি একটা বিষয় খুব ভালো করে জানি, এই দেশে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে আর কেউ কোনো দিন রাজনীতি করতে পারবে না। পঁচাত্তর থেকে নব্বইয়ের সেই কালো সময় আমরা পার হয়ে এসেছি, আর কেউ কখনো এই দেশের মানুষকে সেই অন্ধকার জগতে ঠেলে পাঠাতে পারবে না। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করে কেউ সুবিধে করতে পারবে না, বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের বিচার করে এই গ্লানিময় অধ্যায়কে চিরদিনের মতো সমাপ্ত করে দিতে হবে।

৩.
আমার এই লেখাটি তোমরা যারা শিবির করো, তাদের জন্য। আমি জানি, এটি সম্পূর্ণ অর্থহীন একটি কাজ—আমার এই লেখাটি তোমাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না এবং তোমরা যারা পড়ছ তারা আমার এই লেখায় বিভিন্ন অংশের বিরুদ্ধে এর মধ্যে নানা ধরনের যুক্তি দাঁড় করিয়েছ। শুধু তা-ই নয়, তোমাদের প্রিয় জায়গা—ইন্টারনেটে সম্ভবত এই লেখার বিরুদ্ধে বিশাল একটা প্রচারণা শুরু হবে। কিন্তু তবু আমার মনে হয়েছে, আমার এই কাজটুকু করা উচিত, তোমাদের কখনো যে সত্য কথাগুলো বলা হয়নি, আমার সেটা বলা উচিত।
তোমাদের কাছে আমার প্রথম যে প্রশ্ন সেটি হচ্ছে, তোমরা কি জানো আবুল আলা মওদুদী নামে যে মানুষটির চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনৈতিক দলটি গড়ে উঠেছে, সেই মানুষটিকে মানুষ হত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল (যদিও সেটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি)। তোমরা কি জানো জামায়াতে ইসলামী ইসলাম প্রচারের দল নয়, এটি রাজনৈতিক দল এবং এটি সব সময় ভুল রাজনীতি করে এসেছে? এই উপমহাদেশে যখন ব্রিটিশদের বিদেয় করে পাকিস্তান সৃষ্টি করার আন্দোলন হয়েছে, তখন তারা সেই আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। আবার যখন এই দেশে পাকিস্তান নামের দানবকে পরাস্ত করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তখন তারা বাংলাদেশের বিপক্ষে গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে? এখন যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধ করে থাকা দেশদ্রোহীদের বিচার করা হচ্ছে, তখন আবার জামায়াতে ইসলামী সেই সত্যকে অস্বীকার করে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছে—সেটি ঘটেছে তোমাদের চোখের সামনে এবং তোমরা খুব ভালো করে জানো, সেখানে তোমাদের হূদয়হীনভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমার ধারণা, তোমরা যারা শিবির করো, তারা সম্ভবত কখনোই খোলা মন নিয়ে এই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলো না। তোমরা সব সময়ই নিজেদের সঙ্গে নিজেরা কথা বলো, একে অন্যকে উৎসাহ দাও, একে অন্যের ওপর নির্ভর করো কিন্তু তোমাদের দলের বাইরের মানুষেরা তোমাদের সম্পর্কে কী ভাবে, কখনোই তার খোঁজ নাওনি। যদি খোঁজ নিতে, তাহলে হয়তো তোমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা ছবি দেখতে পেতে। তোমরা সবিস্ময়ে আবিষ্কার করতে, তোমাদের যেভাবে যা কিছু শেখানো হয়েছে, তার সবকিছু সত্যি নয়। তোমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ, এই দেশের অজস্র সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে তোমাদের দলের দু-একটি পত্রিকা বা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া অন্য কোথাও তোমাদের সম্পর্কে একটিও ভালো কথা ছাপা হয় না। কিছুদিন থেকে গাড়ি ভাঙচুর বা পুলিশকে আক্রমণ করার যে নতুন কর্মকাণ্ড শুরু করেছ, সেটি করে তোমরা যে নিজেরাই বিপদগ্রস্ত হতে শুরু করেছ, সেটা কি লক্ষ করেছ? আজ রাতেই আমি খবরে জানতে পারলাম, সাধারণ মানুষ তোমাদের ধাওয়া করছে, তোমাদের আক্রমণ করছে। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, এটি ধীরে ধীরে আরও বাড়তে থাকবে। তোমরা নিজেদের জন্য যে জীবন বেছে নিয়েছ, তার মধ্যে কি বিন্দুমাত্র মর্যাদা আছে? আত্মতুষ্টি আছে?
আজ থেকে কয়েক যুগ আগেও এই পৃথিবী যে রকম ছিল, এখন সেই পৃথিবী নেই। এই পৃথিবী অনেক পাল্টে গেছে। নতুন পৃথিবী তালেবান বা লস্কর-ই-তাইয়েবার পৃথিবী নয়। জামায়াতে ইসলামী বা শিবসেনার পৃথিবীও নয়। নতুন পৃথিবী হচ্ছে মুক্তচিন্তার পুরোপুরি অসাম্প্রদায়িক একটা পৃথিবী। এই নতুন পৃথিবীর মানুষেরা অসাধারণ, তারা একে অন্যের ধর্মকে সম্মান করতে শিখেছে, একে অন্যের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে উপভোগ করতে শিখেছে, একে অন্যের চিন্তাকে মূল্য দিতে শিখেছে। এই নতুন পৃথিবীতে মানুষে মানুষে কোনো বিভাজন নেই। দেশ-জাতির সীমারেখা পর্যন্ত ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।
তাই এই নতুন পৃথিবীতে যখন কেউ ধর্ম দিয়ে মানুষকে বিভাজন করে রাজনীতি করতে চায়, পৃথিবীর মানুষ তখন তাকে পরিত্যাগ করে। জামায়াতে ইসলামীর মতো বা শিবসেনার মতো রাজনৈতিক দল তাই হচ্ছে বাতিল হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দল—নতুন পৃথিবীতে এই দলগুলোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি জানি, যদিও আমি এই লেখাটি লিখেছি যারা শিবির করে তাদের উদ্দেশে কিন্তু তারা আসলে আমার একটি কথাও বিশ্বাস করবে না। যদি বিশ্বাস করেও ফেলে, তার পরও তাদের কিছু করার থাকবে না। এ ধরনের রাজনৈতিক দল যখন তৈরি করা হয়, তখন অনেক লোভ দেখিয়ে দলে টানা হয়। কিন্তু দলে যোগ দিয়ে যদি মোহভঙ্গও হয়, তবু তারা আর দল থেকে বের হতে পারে না। অভিশপ্ত প্রেতাত্মার মতো এক অন্যকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে হয়।
যারা এখনো শিবিরে যোগ দেয়নি, তারা হয়তো এই লেখাটি পড়ে একটুখানি ভাববে। যখন তাকে এই দলে যোগ দেওয়ার কথা বলবে, হয়তো তারা একটিবার চিন্তা করবে, আমাদের এই ভালোবাসার দেশটিকে যারা টুঁটি চেপে হত্যা করতে চেয়েছিল, আমি কেন সেই দলে যোগ দেব? দেশকে যখন ভালোবাসার কথা, তখন কেন আমি দেশের সঙ্গে বেইমানি করব?
মাতৃভূমিকে ভালোবাসার তীব্র আনন্দ যারা উপভোগ করেনি, যারা ভবিষ্যতেও কোনো দিন অনুভব করতে পারবে না, আমি সেসব হতভাগ্য মানুষের জন্য গভীর করুণা অনুভব করি।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক। অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
(লেখাটি প্রথম আলো থেকে নেয়া)


Friday, November 23, 2012

ফেসবুক ব্যবহারে সতর্কতার পরামর্শ সরকারের (Beware of Facebook! )


ফেসবুক ব্যবহারের বিষয়ে সবাইকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার তথ্য অধিদপ্তরের এক তথ্য বিবরণীতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় ফেসুবক ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে ইচ্ছা করলে অন্য কেউ যেকোনো আপত্তিকর ছবি বা মন্তব্যে তাঁকে যুক্ত করতে পারে। এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি কক্সবাজারের রামুতে ফেসবুকের একটি ছবি ট্যাগ করাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ফেসবুকে প্রায়ই আপত্তিকর অনেক পোস্টে অনেককে ট্যাগ করা হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা প্রত্যেককে তাদের নিজ অ্যাকাউন্টের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা গোপনীয়তা এমনভাবে করার সুপারিশ করেছেন, যাতে খুব সহজে যে কেউ ট্যাগ করতে না পারে।

The government on Thursday cautioned Facebook users against anybody tagging them to offensive photographs or comments.

"People are being advised to remain aware and cautious about the matter," it said in a statement.

The warning came about two months after houses and places of worship of the minority Buddhists were burned down in Chittagong and Cox's Bazaar allegedly after the photo of a burned Quran was tagged to a Buddhist youth's Facebook profile to incite hate attacks.

Media investigations later found that the Buddhist youth was not tagged in any Facebook profile, rather zealots doctored a Facebook page to trigger the riot.

According to Bangladesh Telecommunications Regulatory Commission's anti-cyber crime cell, over a thousand complaints, most of which centre around the popular social networking site Facebook, were lodged by female students in the last nine months since the cell became operative.

One of BTRC's cybercrime specialists told bdnews24.com that most of the complaints were about fake Facebook profiles. Many complained that their identities or pictures were being used to open fake accounts.

Several people were arrested for making negative comments about Prime Minister Sheikh Hasina on Facebook on different occasions. A university teacher was also jailed for making a comment against her in his Facebook status.

Five Facebook pages were blocked following High Court orders in May this year for hurting religious sentiments.

A fifth of a million are using Facebook in Bangladesh currently as the number crosses the mark of one billion worldwide.
(সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো এবং বিডি নিউজ ২৪)


Tuesday, November 6, 2012

Rupkotha (Lyric) Arfin Rumey & Kheya


শিরোনামঃ রূপকথা.
কন্ঠঃ আরফিন রুমি এবং কেয়া.
অ্যালবামঃ রূপকথা.

*******************
ওহ  নতুন সূর্যের ঘর যদি যায় থেমে যায়
বিষণ্ণ সূর্য আঁধারে হারায় !

শকুনের উল্লাসে আকাশ ডেকে যায় লজ্ঝায়
স্বপ্নের পাখিরা ডানা ঝাঁপটায় নীল ঝন্ত্রনায়

ঝড় নামে কালো অমাবস্যায়
স্বপ্ন গুলো সব...... দূরে উড়ে যায় .........

রূপকথার গল্পের মত তবু বসে থাকে সে ...
বসে থাকে আকাশ দেখার অপেক্ষায় !.........

সব গান যদি হারিয়ে ফেলে সুর
ছন্ধ হারায় !...
আকাশ যদি অকারন মেঘে এ ডেকে যায়..
ঝড় নামে কালো অমাবস্যায় !!
স্বপ্ন গুলো সব দূরে উড়ে যায় .....

রূপকথার গল্পের মত তবু বসে থাকে সে ...
বসে থাকে আকাশ দেখার অপেক্ষায় !........


Monday, November 5, 2012

একজন দিনমজুর রঞ্জিত স্যার !


দিনটি ঠিক মনে নেই, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে হবে। খুব সকালে প্রথম আলোর প্রধান বার্তা সম্পাদকের ফোন, ফোন ধরতেই বললেন, আজকের ডেইলি স্টার দেখেছেন? বললাম, না, পত্রিকা এখনো আসেনি। বললেন, পত্রিকাটা দেখে ফোন দেবেন। অনেক সময় অপেক্ষার পর পত্রিকাটি যখন এল, দেখলাম ওই মাদ্রাসার এমপিওভুক্তি না হওয়ার কারণে শিক্ষকেরা দিনমজুরি করছেন এমন একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে।
পরে তিনি আমাকে বললেন, আপনি এলাকায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন প্রতিবেদন করার মতো কিছু পাওয়া যায় কি না।
একদিন সকাল সকাল ছুটলাম জেলা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ওই মাদ্রাসায়। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললাম। তাঁরা জানালেন, কয়েকজন শিক্ষক খুবই গরিব। তাই তাঁরা মাঝেমধ্যে দিনমজুরিও করেন। কিন্তু রঞ্জিত কুমার রায় নামের একজন শিক্ষক তখনো মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। অনেক চেষ্টার পর মাদ্রাসার সুপার গোলাম মোস্তফা বললেন, উনি দুপুরের পর ক্লাস নেন। এখন কোথায় জানতে চাইলে বলেন, অনেক দূরে ভাটায় কাজ করেন। তাঁর কথামতো ছুটলাম সেখান থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নে এবিএল (২) ইটভাটায়। গিয়ে দেখলাম, অন্য দিনমজুরদের মতো একজন শিক্ষকও ইটের বোঝা টানছেন। দৃশ্যটি দেখে চোখে পানি এসে গেল।
ফাল্গুনের ভরদুপুর, রোদটা বড্ড কড়া হয়ে উঠেছে। দরদর করে ঝরছে ঘাম। ইটের ভারী বোঝায় টন টন করছে ঘাড়টা। মাথায় গামছা পেঁচানো, গায়ে একটি ছেঁড়া ময়লা গেঞ্জি, পরনে ছেঁড়া ফুল প্যান্ট। সামনে গিয়ে তাঁর পথ রোধ করে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি রঞ্জিত স্যার?
চমকে গেলেন। ইটের বোঝাটা আর কাঁধে রাখতে পারলেন না। সেখানেই রেখে লজ্জাবনত কণ্ঠে বললেন, কেন? আপনার পরিচয়? পরিচয় পেয়ে তিনি প্রথমে আন্দাজ করে নিয়েছিলেন হয়তো মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে কাজ করার অপরাধে সাংবাদিকের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
আপনি কি বেড়াকুটি বরুয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক? জবাব এল, হ্যাঁ, আমাদের মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়নি, তাই বেতন পাই না। প্রথম বেলাটা ভাটায় কাজ করি, দ্বিতীয় বেলায় ক্লাস নিই। আমার মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আমি কাজ করছি। আমার কোনো জমিজমা নেই, মাদ্রাসায় বেতন পাই না, সংসার চলে একবেলা দিনমজুরির ১০০ টাকায়।
তাঁর পুরো নাম রঞ্জিত কুমার রায়, বয়স ৩৬ বছর। তাঁর বাড়ি দিনাজপুর জেলার খানসামা উপজেলার ডুবুলিয়া গ্রামে।
১৯৯৫ সালে দিনাজপুর কেবিএম কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন, ২০০০ সালে তাঁর বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে নীলফামারী জেলা সদরের সোনারায় ইউনিয়নের বেড়াকুটি বরুয়া দাখিল মাদ্রাসায় চাকরিতে যোগ দেন। এ জন্য মাদ্রাসার উন্নয়নে টাকা দিতে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ১৫ শতাংশ জমি বিক্রি করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় কোনো বেতন পান না।
গৃহশিক্ষকের কাজ করেন না কেন? এলাকাটা খুবই দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা। কে টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াবে। যাঁদের একটু সামর্থ্য আছে, তাঁরা ছেলেমেয়েদের শহরে পড়ান।
রঞ্জিত স্যারের এই ‘এক বেলা শিক্ষকতা, অন্য বেলা দিনমজুরি’ শিরোনামে ২০১১ সালের ৯ মার্চ প্রথম আলোয় একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দেশ-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পরে। অনেকেই রঞ্জিত স্যারকে সহযোগিতার হাত বাড়াল। পাঠকদের অনুরোধে রঞ্জিত স্যারের একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হলো। কেউ ব্যাংক হিসাবে, কেউ কুড়িয়ার সার্ভিসে, আবার কেউ বা নিজে এসে রঞ্জিত স্যারকে সহযোগিতা করলেন।
অনেকে রঞ্জিত স্যারের একটি থাকার ঘর ও মাদ্রাসার ঘর নির্মাণের জন্য প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাতে থাকেন।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান পাঠকদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তহবিল গঠন করলেন, ওই তহবিলে জমা তিন লাখ ৫০ হাজার, এর সঙ্গে প্রথম আলো ট্রাস্ট তহবিল থেকে প্রায় এক লাখ ৮৪ হাজার টাকা দিয়ে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার টাকায় করা হলো শিক্ষকের পরিবারের জন্য একটি আধাপাকা টিনের ঘর, ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল এবং মাদ্রাসার জন্য একটি ক্লাসরুম, ল্যাট্রিন ও টিউবওয়েল।
স্থানীয় সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর আশ্বস্ত করলেন নীলফামারী জেলায় যদি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়, সেটি হবে রঞ্জিত স্যারের বেড়াকুটি বরুয়া দাখিল মাদ্রাসা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ওই সময় থেকে অদ্যাবধি নীলফামারী জেলায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি।
কেমন আছেন রঞ্জিত স্যার—জানতে সম্প্রতি (শুক্রবার সকালে) গিয়েছিলাম ডুবুলিয়া গ্রামে। রঞ্জিত স্যার তখন প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে করে দেওয়া তাঁর ঘরের বারান্দায় মেয়ে শিশুশ্রেণীর ছাত্রী ভূমিকা রানী রায় ও ছেলে পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রিপন রায়কে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছিলেন। স্ত্রী সৈব্যা রায় তাঁদের পাশে অন্যমনস্ক হয়ে বসেছিলেন।
এ সময় কথা বললে রঞ্জিত বলেন, ‘বাচ্চাদের একটু পড়া দেখিয়ে দিচ্ছিলাম। এখনই দোকান খুলতে যেতে হবে। কারণ আজ শুক্রবার মাদ্রাসা বন্ধ আছে।’
প্রথম আলোয় তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দেশ-বিদেশের পাঠকদের সহযোগিতায় তিনি ওই গ্রামে তাঁর বাড়ির পাশে ক্যানেলের বাজারে একটি ওষুধের দোকান খুলেছেন। এখন একবেলা ভাটায় দিনমজুরির বদলে একবেলা ওষুধের দোকান চালান। এখান থেকে প্রতিদিন ৫০-১০০ টাকা আয় হয়। এখন কেমন আছেন? জবাব আসে ভগবানের কৃপায় আপনাদের আশীর্বাদে ভালো। দোকান কেমন চলছে? খুব ভালো না। কোনো রকম দিন যাচ্ছে।
কথা বলে জানা গেল, তিনি যে সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছিলেন সেখান থেকে কিছু ঋণমহাজন পরিশোধ করেছেন, আর এক লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকানঘর করে সেখানে কিছু ওষুধ রেখে কেনাবেচা করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার জীবন যখন মৃতপ্রায়, তখন প্রথম আলো আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে গোটা বিশ্বে আমার পরিচয় ঘটিয়ে দিয়েছে। ক্ষুদ্র এই মানুষটাকে বৃহৎ মানুষদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। প্রথম আলোর সম্পাদকের মতো একজন এত বড় মানুষ আমার বাড়িতে এসেছে, এরপর আর আমার চাওয়া-পাওয়ার কী থাকতে পারে। প্রথম আলো পরিবারের সবার জন্য আমাদের শুভকামনা।’
---------------------------------------------------------------------------
(লেখাটি প্রথম আলো পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)