Monday, July 30, 2012

অভিমানী গুলতেকিনের সঙ্গে আর দেখাই হল না হুমায়ূন আহমেদের!

Gultekin Khan
নুহাশ আহমেদ। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বড় ছেলে। যার নামেই  রেখেছিলেন তার পরম আত্মিক জায়গার নামটি-নুহাশ পল্লী। এই নুহাশই সব সময় যোগাযোগ রাখতো বাবা হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। যেতো নুহাশ পল্লীতে। বাবার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতো।
এমনকি বাবার দুটি গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদকও সে।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে তার বিচ্ছেদের পর বাবার সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ রাখেনি তার তিন মেয়ে নোভা, শিলা ও বিপাশা। একই শহরে থেকেও তার সন্তানদের সাথে দেখা হয় না এই কষ্টের আকুতি তার মনের ভেতর ছিল সব সময়। আত্মীয়-স্বজনের আড্ডার পরিসরে সে কথাই ব্যক্ত করেছেন বার বার। তবে বাবার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর নিজেদের আর ধরে রাখতে পারেনি তারা। হুমায়ূনের ধানমন্ডির বাসায় স্বামীদের নিয়ে ছুটে চলে এসেছিলো তাকে এক নজর দেখতে। কন্যাদের দেখে হুমায়ূনের মনের ভেতর বয়ে যাওয়া উত্তাল ক্রন্দনকে সেদিনও লুকিয়ে রেখেছিলেন নিভৃতচারী কম বক্তা এই লেখক।
কিন্তু কখনোই গুলতেকিনের সাথে তার দেখা হয়নি। অভিমানী গুলতেকিন এখন থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রে তার ছোট মেয়ে বিপাশার কাছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ১০ মাস ধরে হুমায়ূন আহমেদ চিকিত্সাধীন থাকলেও তাকে দেখতে আসেননি তিনি। এমনকি ফোনেও খবর নেননি।
ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ-গুলতেকিন। আনন্দময় গোছানো একটি সংসার ছিল তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকাকালীন তার সহকর্মীদের হুমায়ূন নিজেই বলতেন মেয়েটি তাকে পাগলের মত ভালোবাসে। তিনি  এও বলেছেন, তার জীবনের শ্রেষ্ঠ নারী গুলতেকিন। তার লেখা অনেক গ্রন্থ উত্সর্গ করেছেন তিনি গুলতেকিনকে। এমনকি অনেক বইয়ের স্বত্ব দিয়েছেন  তাকে। ধানমন্ডির একটি বাড়িও তাকে দিয়ে গিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর দ্বিতীয় স্ত্রী শাওনকে দিয়েছেন সেন্টমার্টিনের সমুদ্র বিলাস কুটির।
Gultekin Khan
হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় বিয়ের পর প্রচণ্ড ক্ষোভ আর অভিমান করে চার সন্তান নিয়ে সরে  আসেন গুলতেকিন। সেই দহনের জ্বালা আজও হয়তো তার হূদয়ে স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে। তাই মৃত্যুর পরও হুমায়ূনকে দেখতে আসেননি তিনি।
১৯৭৩ সালে হুমায়ূন আহমেদের সাথে বিয়ে হয় গুলতেকিনের। ২০০৩ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হলে হুমায়ূন আহমেদ ২০০৫ সালে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে।  তাদের সাত বছরের বিবাহিত জীবনে  জন্ম হয় নিষাদ ও নিনিতের। ।
এই দুই সন্তানই ছিল  হুমায়ূন আহমেদের জীবনের শেষ সময়গুলোর একমাত্র আনন্দের সঙ্গী। তাদের শিশুসুলভ কাজ-কর্মে তৃপ্ত হতেন তিনি। তাইতো শিশুর মনোজগতে বিচরণ করে নিজেকে খুঁজে ফিরেছেন। রঙ তুলির আচড়ে তুলে ধরেছেন তার চিন্তাকে, নিউইয়র্কের আকাশে মেলে ধরেছেন বাংলার সবুজ প্রকৃতি আর স্বপ্নীল আকাশ।
(সুত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক)


No comments:

Post a Comment